কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়?

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়?

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়?

আমরা অনেকেই জানি ইউটিউব থেকে আয় করা যায় এবং লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিনিয়ত Youtube থেকে টাকা আয় করছে। কিন্ত কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়? নতুনদের সে বিষয়ে সঠিক তথ্য আমাদের জানা নেই। অনেকেরই ইউটিউব থেকে আয় করার ইচ্ছা থাকলেও সঠিক ধারণা না থাকার কারণে ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে পারে না।

আজ আমরা জানবো ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায় কি এবং কি কি উপায় ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়। সর্বপরি ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে কত আয় করা যায়। ইউটিউব থেকে টাকা তোলার সহজ উপায় কি জানবো। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক-

ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায়:-

ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করার উপায় খুব সহজ আবার বেশ কঠিন, তবে অসম্ভব না।  Youtube থেকে আয় করার জন্য অবশ্যই একটি চ্যানেল থাকতে হবে এবং নিয়মিত Youtube চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করতে হবে। ইউটিউব থেকে আয় করার একমাত্র পথ হলো ভিডিও তৈরী করে আপলোড করা। ভিডিও আপলোড না করে কোন ভাবেই ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব না। তাই যত বেশি সম্ভব নতুন নতুন ভিডিও তৈরী করে তা Youtube চ্যানেলে আপলোড করতে হবে এবং এই ভিডিওর মাধ্যমে কমপক্ষে ৫টি উপায়ে Youtube থেকে আয় করা সম্ভব হবে। 

Youtube থেকে আয় করার জন্য কি ধরণের ভিডিও বানাবেন?

Youtube থেকে আয় করার জন্য বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের ফানি ভিডিও তৈরী করতে পারেন। মোটিভেশনাল ভিডিও তৈরী করতে পারেন, পুরাতন ইতিহাস নিয়ে ইনফরমেশনাল ভিডিও তৈরী করতে পারেন, টেক রিলেটেড ভিডিও তৈরী করতে পারেন, অনলাইন থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে ভিডিও বানাতে পারেন, বিভিন্ন ধরণের পোডাক্ট রিভিউ, মুভি রিভিউ ইত্যাদি ভিডিও তৈরী করে আপলোড করতে পারেন ইত্যাদি।

আমি যে বিষয়ের উপর ভিডিও বানাতে বলেছি আপনি শুধু সেগুলোর উপরেই ভিডিও বানাতে পারবেন তা না। আপনি যেকোন বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরী করতে পাবরেন, যা আপনি ভালো পারেন বা যেখানে আপনার ভালো জ্ঞান আছে। তবে একটু খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিডিওগুলো ভিজিটরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।   

ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়:-

ইউটিউব একটি ফলের গাছের মত। আজ আপনি একটা ফলের গাছ লাগাবেন এবং নিয়মিত পরিচর্চা করতে থাকলে এক দিন না এক দিন দেখবেন গাছটি আপনাকে ফল দিচ্ছে। তেমনি ইউটিউবে কাজ শুরু কলেই ইনকাম হবে না। Youtube চ্যানেল তৈরী করে সেখানে নিয়মিত ভালো ভালো কন্টেন্ট/ভিডিও আপলোড করতে থাকলে কখনো না কখনো আপনি সাকসেস অবশ্যই পাবেন।

ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার অনেক উপায় রয়েছে সেগুলো মধ্যে সব থেকে ভালো উপায়গুলো সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলো। আপনিও নিচে উল্লেখ করা যে কোন উপায়ে Youtube থেকে আয় করতে পারবেন। 

গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আয়:-

youtube থেকে টাকা আয়

আমরা প্রায় সবাই ইউটিউব থেকে কম বেশি ভিডিও দেখি। ভিডিও দেখার সময় অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন ভিডিওর উপর নানা ধরণের বিজ্ঞাপন শো করে। কোন কোন বিজ্ঞাপন স্কিপ না করলে ভিডিও দেখা যায় না আবার কোন কোন বিজ্ঞাপন ভিডিওর নিচে দিকে শো করে। মুলত এই বিজ্ঞাপনগুলো গুগল এ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপন। এই সকল বিজ্ঞাপনের উপর যখন ক্লিক পড়ে তখন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের বা চ্যানেল মালিকের আয় হতে থাকে। 

অধিকাংশ ইউটিউবার Youtube চ্যানেল থেকে টাকা আয় করে গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে। সাধারণ কিছু রিকোয়ারমেন্ট কমপ্লিট হলেই ইউটিউবের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন শো করানো যায়। একটি চ্যানেল থেকে গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করতে হলে লাস্ট এক বছরে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪ হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম হতে হবে। তাহলে গুগলের এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়া যায়। 

মজার ব্যাপার হলো, ভালো মানের ভিডিও তৈরী করলে তা খুব দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। একটি Youtube চ্যানেলে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার জন্য দুই-চারটা ভিডিও ভাইরাল হলেই যথেষ্ট। তাই ভিজিটরের উপকারে আসে এমন ভিডিও প্রতিনিয়ত তৈরী করে আপলোড করলে খুব দ্রুত গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে Youtube থেকে টাকা আয় করা যায়।

তবে এখানে আরো একটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে যে, অন্যের কোন ভিডিও বা অডিও কপি করে নিজের চ্যানেলে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসবে এবং পর পর ৩ টি স্ট্রাইক চলে আসলেই চ্যানেল সাসপেন্ড  হয়ে যাবে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়:-

অনলাইন থেকে আয় করার জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এফিলিয়েট মার্কেটিং করে মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করা যায়। এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্য ব্যক্তির পণ্য বিক্রি করে তার থেকে কমিশন নেয়া। যেমন Amazon এ অসংখ্য প্রোডাক্ট আছে সেগুলোর এফিলিয়েট লিংক নিয়ে আপনি যদি প্রোমট করেন এবং আপনার লিংকে ক্লিক করে যদি কেউ পণ্যটি ক্রয় করে তাহলে আপনি নির্ধারিত এমাউন্টের কমিশন পাবেন। 

এখন কথা হচ্ছে ইউটিউবের সাথে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর কি সম্পর্ক? আপনি যে প্রোডাক্টের মার্কেটিং করবেন সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিভিউ ভিডিও বানাবেন এবং ইউটিউবে আপলোড করে রাখবেন। ভিডিও ডেসক্রিপশনে আপনার এফিলিয়েট লিংক এড করে রাখতে হবে। আপনার ভিডিও দেখে যদি কেউ পন্যটি কেনার জন্য আগ্রহী হয় তাহলে সে অবশ্যই ডেসক্রিপশন থেকে এফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে পন্যটি ক্রয় করবে এবং আপনি কমিশন পাবেন।

ইউটিউবের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে আয়:-

বিক্রয় করার মত কোন পণ্য যদি আপনি উৎপাদন করে থাকেন তাহলে সে সকল পণ্যের উপর ভিডিও তৈরী করে ইউটিউবে আপলোড করে পণ্যের প্রচারণা করতে পারেন এবং তা থেকে আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার আয় হবে পণ্য বিক্রি করে এবং ইউটিউব আপনার পণ্যে প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। 

অনেকেই আছেন যারা নিজেদের বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের ফুল ও ফলের চারা উৎপাদন করে থেকেন। এসব ফুল ও ফলের চারা গাছ অনলাইনের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে বিক্রি হয়। আপনি আপনার উৎপাদিত চারা গাছের বর্ণণা দিয়ে খুব সহজেই ভিডিও তৈরী করতে পারবেন এবং সেগুলো বিক্রয়ের জন্য যোগাযোগ করতে বলবেন। এই পদ্ধতিতে অনেকই নিজেদের ছোট ছোট ব্যবসাকে খুব সহজেই প্রসারিত করে সাকসেস পেয়েছে। 

ইউটিউবে স্পন্সরশীপের ভিডিও তৈরী করে আয়:-

ভালো মানের ভিডিও তৈরী করতে থাকলে বড় বড় কোম্পানি তাদের পণ্য বা সেবার প্রসারের জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। তারা আপনাকে বলে দেবে আমাদের এই সার্ভিস আছে, আপনি যদি আমাদের সার্ভিসকে আপনার ভিডিওর মাঝে উল্লেখ করেন তাহলে আমরা আপনাকে কমিশন দেবো। 

আপনি যদি রাজি থাকে তাহলে তাদের পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে একটি ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করে দিতে পারেন অথবা আপনার ভিডিওর মাঝে তাদের সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণই তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী করতে হয়। এতে করে তাদের সার্ভিস সম্পর্কে আপনার সাবস্ক্রাইবারগণ অবগত হয় এবং তাদের সার্ভিস অনেকেই গ্রহণ করে বিধায় তাদের ব্যবসায়ের প্রসার ঘটে। একটি স্পন্সরশীপের ভিডিও তৈরী করলে খুব ভালো পরিমাণ টাকা আয় হতে পারে।

ইউটিউব থেকে ডোনেশনের মাধ্যমে আয়:-

ইউটিউবে ডোনেশন দেয়ার প্রক্রিয়া আছে। যদি আপনি খুব ভালো মানের ইউটিউবার হন এবং আপনার ভিডিও দেখে কারো অসামান্য উপকার হয় তাহলে সে খুশি হয়ে আপনাকে ডোনেশন দিতে পারে। তবে ডোনেশন থেকে আয় করার চিন্তা করে ইউটিউবিং করা উচিত নয়। কারণ ইউটিউবে যতই ডোনেশনের ব্যবস্থা থাক না কেন খুব সহজে কেউ আপনাকে ডোনেশন দিতে চাইবে না। সুতরাং যদি কখনো ডোনেশন আসে তো ভালো কথা আর যদি ডোনেশন না আসে তাহলে তার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকা উচিত হবে না। 

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা আয় করা যায় এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারবে না। কারণ সবারই সমপরিমণ আয় কখনোই হয় না। কারো বেশি আয় হয় আবার কারো কম আয় হয়। এটা সম্পূর্ণই কাজের উপর নির্ভর করে। কোন ব্যক্তির ভিডিও যদি সারা বিশ্ব থেকে ভিউ হয় তাহলে তার এক রকম আয় হয় আবার কোন ব্যক্তির ভিডিও শুধু বাংলাদেশ থেকে ভিউ হয় তাহলে তার ক্ষেত্রে এক রকম আয় হয়। উন্নত দেশ থেকে ভিডিও ভিউ হলে এবং বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক পড়লে প্রতি ক্লিকে ০.০২ ডলার থেকে শুরু করে ৫ ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে। কখনো কখনো ২০ ডলার বা তার থেকেও বেশি আয় হয়।

পক্ষান্তরে বাংলাদেশ থেকে একটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক পড়লে ০.০১ ডলার থেকে ০.০৪ ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি ১০০০ ভিউ হলে ১ ডলার থেকে ২ ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে। এটা নির্ভর করে CPC (Cost Per Click) এর উপর। CPC প্রতিদিন আলাদা আলাদা হতে পারে। আমাদের দেশের CPC খুবই কম তাই ভিউ এর তুলনায় আয় কম হয়। 

সুতরাং, ইউটিউব থেকে অধিক পরিমাণ আয় করতে চাইলে এমন ভিডিও তৈলী করবেন যা সারা বিশ্ব থেকে মানুষ দেখে। অর্থাৎ ইংরেজিতে ভিডিও তৈরী করবেন, বাংলায় ভিডিও তৈরী করলে বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু কিছু এলাকার লোকজন ছাড়া কেউই সে ভিডিও দেখবে না।

ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা তোলা যায়?

গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার পর পেমেন্ট নেয়ার দুইটা উপায় আছে। প্রথমত চেকের মাধ্যমে পেমেন্ট নেয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যাবে। সব থেকে ভালো এবং সহজ উপায় হচ্ছে Youtube থেকে আয় করা টাকা ব্যাংকে ট্রান্সফার করা। তবে পেমেন্ট পেতে হলে কমপক্ষে ব্যালেন্স এ ১০০ ডলার থাকতে হবে। ব্যালেন্স এ ১০০ ডলার হলেই ইউটিউব প্রতিমাসের ২১-২২ তারিখের মধ্যে ডলার ব্যাংকে সেন্ট করে।

পরিশেষে:-

উপরোক্ত উপায়গুলোর মাধ্যমে একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়। ইউটিউব চ্যানেল থেকে কিভাবে আয় করার ৫টি উপায়ের মধ্যে প্রথম ৪টি উপায় হচ্ছে সব থেকে ভালো উপায়। আপনি যদি কোন এফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে থাকেন তাহলে পণ্যের রিভিউ ভিডিও তৈরী করে খুব সহজে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। ভালো মানের ভিডিও তৈরী করলে এমনিতেই স্পন্সরশীপ পাবেন। যদি কোন ছোট খাটো ব্যবসায় আপনার থাকে তাহলে ব্যবসায়ের প্রসার ঘটানোর জন্য ইউটিউব ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোর মধ্যে কোনটিই যদি আপনি না করেন তাহলে গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করাতে পারবেন। 

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন পৃথীবির কোন কাজই সহজ না। তাই ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করতে চাইলে মনকে স্থির রেখে ধৈয্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। হয়তো কখনো কখনো ব্যার্থ হবেন তাই বলে থেমে যাবেন না। হাজারো মানুষ ইউটিউবিং করে টাকা আয় করতে পারলে আপনি কেন পারবেন না? আপনিও অবশ্যই পারবেন Youtube থেকে টাকা আয় করতে। তার জন্য একটু পরিশ্রম দিতেই হবে। এই পরিশ্রমটা স্বীকার করে নিতে পারলে একদিন না একদিন সাকসেস অবশ্যই পাবেন।

এই ছিলো Youtube থেকে টাকা আয় করার ৫টি উপায়। এ বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টস করে জানাবেন আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Custom Widget

Recent in Sports