ব্লগিং করে টাকা আয় করুন - ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

ব্লগিং করে টাকা আয় করুন - ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়


আপনি আমি সকলেই জানি ব্লগিং করে টাকা আয় করা যায়। যারা ব্লগিং করেন তারা খুব ভালো করেই জানে ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়। কিন্ত যে ব্লগিং করে না সে সঠিকভাবে জানে না যে ব্লগিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়। ব্লগিং করে কি পরিমাণ টাকা আয় করা যায় সে বিষয়ে ধারণা তো দুরের কথা আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না ব্লগিং কি?  

যারা লেখাপড়া শিখে বেকার বসে আছেন অথবা লেখাপড়া করছেন তাদের জন্য ব্লগিং হতে পারে আয়ে অন্যতম একটি পথ। আমাদের দেশে বেকারত্বের যে সমস্যা তাতে সকলের পক্ষে ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি ব্লগিং করে অনলাইন থেকে আয় করার চেষ্টা আপনার অবশ্যই করা উচিত। 

এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন ব্লগিং কি? কিভাবে ব্লগিং শিখতে পারবেন এবং ব্লগিং শিখে কিভাবে কাজ শুরু করতে হয়। একটি ব্লগ ওয়বেসাইট থেকে কি পরিমান টাকা প্রতি মাসে আয় করা সম্ভব এ সকল বিষয়ে মোটামুটি একটা ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন।

ব্লগিং কি?

ব্লগ (Blog) হচ্ছে ইংরেজি শব্দ এবং Weblog এর শর্ট ফরম হচ্চে Blog। Blog এর অর্থ দাড়ায় ভার্চুয়াল ডায়েরি বা ব্যক্তিগত অনলাইন দিনলিপি। অন্যভাবে বলতে গেলে এটি এক প্রকার অনলাইন জার্নাল বা তথ্যমূলক ওয়েবসাইট, যেখানে কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি বা কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যকলাপ, চিন্তা ভাবনা বা বিশ্বাসের তথ্য উপস্থাপন করে থাকে।

যদি আমরা সহজে বুঝতে চাই তাহলে বলা যেতে পারে, ব্লগিং হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে সেখানে কোন এক বা একাধিক বিষয় সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য নিয়ে লেখা লেখি করা। এখানে যে কোন ভাষায় লেখা লেখি করা যায়।

ব্লগিং কিভাবে শিখব?

যদি আমরা বুঝতে পারি ব্লগিং কি তাহলে ব্লগিং কিভাবে শিখব এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে পেয়ে যাবো। যেহেতু কোন একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে সেখানে এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করাই ব্লগিং সেহেতু আমাদেরকে কোন না কোন বিষয় সম্পর্কে লেখা লেখি করা শিখতে হবে। ব্লগে আমরা যা কিছু লিখবো তাকে সব সময় আর্টিকেল বলবো। 

আপনি যে বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখবেন সে বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এই ধারণা আপনি বই পড়ে নিতে পারেন অথবা ইন্টারনেট থেকে যেমন গুগল সার্স করে, ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে তথ্য সংগ্রহ করে ধারণা নিয়ে নিজের মত করে সেগুলো পুনরায় লিখতে পারেন।

আপনি যত বেশি আর্টিকেল লিখতে পারবেন তত বেশি আয় করতে পারবেন। তাই প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল লিখতে হবে এবং ব্লগে পোষ্ট করে যেতে হবে। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্টিকেল লিখতে পারেন তাহলে ব্লগিং অবশ্যই শুরু করতে পারবেন। আর্টিকেল লিখতে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে প্রয়োজনে আর্টিকেল রাইটার হায়ার করে তাদের দিয়ে আর্টিকেল লিখে নিতে পারবেন। তবে আর্টিকেল লেখানোর জন্য যে পরিমাণ খরচ হবে তা সকলের দ্বারা বহন করা সম্ভব হয় না। 

তাই যদি সম্ভব হয় আপনি যে বিষয়ের উপর লেখালেখি করবেন সে বিষয়ের উপর পড়ালেখা করে অথবা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আর্টিকেল লিখবেন।

ব্লগিং কিভাবে করতে হয়?

আপনি যদি ব্লগিং করতে চান তাহলে প্রথম কাজ হবে যে কোন এক বা একাধিক বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল লেখা। আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, কোন বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্টিকেল আপনি লিখতে পারবেন তাহলে সেই আর্টিকেল ব্লগে পোষ্ট করে তা থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন। 

ব্লগিং শুরু করতে হলে যে জিনিসগুলো আপনার প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে, 

প্রথমত, একটি কম্পিউটার অথবা স্মার্ট ফোন। তবে স্মার্ট ফোন দিয়ে লেখা লেখির কাজ করা খুবই সময় স্বাপেক্ষ বিষয়। লেখা লেখির কাজের জন্য একটি ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ হলে ভালো হয় এবং অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হব। 

দ্বিতীয়ত, একটি ওযেবসাইট তৈরী করতে হবে। ওয়েবসাইট তৈরীর কথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বর্তমান সময়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করা খুবই সহজ কাজ। আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে অথবা অল্প কিছু টাকা খরচ করে খুব সহজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে ফেলতে পারেন। 

সাধারণত দুইটা মাধ্যমে খুব সহজে এবং অল্প খরচে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করা যেতে পারে। মাধ্যম দুটির একটি হচ্ছে Blogger এবং অপরটি হচ্ছে WordPress। 

Blogger এ ব্লগ সাইট তৈরী:

Blogger হচ্ছে গুগলের একটি সার্ভিস। Blogger এর মাধ্যমে ব্লগ সাইট তৈরী করা একদমই সহজ এবং কম খরচে হয়ে যায়। আপনি চাইলে বিনা খরচে এখনে থেকে ওয়েবসাইট তৈরী করে টাকা আয় করতে পারবেন। 

তবে আমি আপনাদেরকে একদম বিনা খরচে সাইট তৈরী করার পরামর্শ দেয়ার চেয়ে সামান্য এক থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে সাইট তৈরী করার পরামর্শকে বেশি প্রাধান্য দেবো। কারণ সব সময় ফ্রি জিনিস ব্যবহার করে সাকসেস পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাছাড়া একদম ফ্রিতে একটি স্থায়ী আয়ে উৎস্য তৈরী করার চিন্তা না করাই ভালো। 

ব্লগারে ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য যে খরচগুলো করা উচিত সেগুলো হচ্ছে, একটি ভালো মানের ডোমেইন কেনা। একটি .com/.net/.info ডোমেইন কিনতে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা খরচ হতে পারে। একটি পেইড ডোমেইন ব্যবহার করলে আপনার ব্লগ সাইটটি প্রোফেশনাল মানের দেখাবে, সহজেই গুগলে র‌্যাংক পেতে পারেন। অপরদিকে ফ্রি ডোমেইন দেখে ভিজিটর আপনাকে প্রোফেশনাল নাও ভাবতে পারে।

একটি প্রিমিয়াম থীম/টেমপ্লেট ক্রয় করা। ১০০০ টাকার মধ্যে খুব ভালো ভালো ব্লগার টেমপ্লেট কিনতে পাওয়া যায়। প্রিমিয়াম থীম ব্যবহার করলে থীমের ফুটারে থীম ওনারের কপিরাইট রিমুভ করে নিজের কপিরাইট ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া থীমের কারণেই ওয়েবসাইট প্রোফেশনাল মানের দেখায়। 

সুতরাং, ব্লগারে ওয়েবসাইট তৈরী করতে এককালিন সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা খরচ করলেই সুন্দর একটি ব্লগ সাইট তৈরী করা যায় এবং প্রতিবছরে ডোমেইন রিনিউ করার জন্য ১০০০ টাকা করে খরচ হবে।

WordPress এ ব্লগ সাইট তৈরী:-

যদিও WordPress খুবই জনপ্রিয় একটি CMS (Content Management System) কিন্ত সকলের পক্ষে WordPress ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরী করা সম্ভব হয় না। কারণ WordPress এ সাইট তৈরী করতে হলে একটি ডোমেইন কিনতে হবে, থীম কিনতে হবে, হোস্টিং কিনতে হবে এবং SSL Certificate কিনতে হতে পারে।

WordPress এর থীমের দাম ব্লগার থীমের চেয়ে একটু বেশি। অর্থাৎ একটি থীম কম করে ২০০০ টাকা, ডোমেইন ১০০০ টাকা, হোস্টিং ৩০০০ টাকা SSL Certificate প্রায় ১০০০ টাকা, সর্বমোট ৮০০০-৯০০০ টাকা এককালীন খরচ করতে হবে। এরপর প্রতি বছরে ডোমেইন এবং হোস্টিং রিনিউ করতে হবে। 

WordPress এ সাইট তৈরী করতে যে শুধু খরচই বেশি তা নয় WordPress এ সাইট তৈরী করলে তার সুযোগ সুবিধাও বেশি। ইচ্ছামত সাইটকে কাস্টমাইজ করা যায়, ইচ্ছামত প্লাগিনস ব্যবহার করে বড় বড় কাজ খুব সহজেই করে ফেলা যায় ইত্যাদি। 

যদি আপনি কম খরচে ব্লগ সাইট তৈরী করে আয় করতে চান তাহলে ব্লগার এ সাইট তৈরী করে নিতে পারেন। শুধু ব্লগিং করে আয় করার জন্য ব্লগার খুবই ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম।

ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

ব্লগিং করে প্রতিমাসে কত টাকা আয় করা যায় এর সঠিক উত্তর কেউই দিতে পারবে না। কারণ সকল ব্লগারের আয় একরকম না এবং প্রতি মাসে সকলের যে সমপরিমাণ টাকা আয় হবে তা নয়।

যারা শুধু ব্লগিং করে আয় করে তাদের আয়ের প্রধান মাধ্যমে হচ্ছে Google Adsense বা অন্যান্য কিছু এড নেটওয়ার্ক। যদিও সাইটে এড বসানোর পরিবর্তে অন্যান্য কিছু উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায় তবুও অধিকাংশ মানুষ এডস থেকেই আয় করতে পছন্দ করে থাকে। Google Adsense হচ্ছে সব থেকে জনপ্রিয় Ad Network এবং ব্লগিং করে Google Adsense থেকে কি পরিমান টাকা আয় করা সম্ভব হবে তার কিছু ধারণা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। 

Google Adsense থেকে আয় হয় মুলত সিপিস (CPC- Cost Per Click) এর উপর নির্ভর করে এবং এখানে দেশ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। উন্নত দেশের CPC এবং আমাদের দেশের CPC এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। 

আমাদের দেশ থেকে CPC খুবই কম দেয়া হয়। আপনার ওয়েবসাইটে গুগলের যে বিজ্ঞাপন শো করবে সেই বিজ্ঞাপনের উপর যদি বাংলাদেশ থেকে কেউ ক্লিক করে তাহলে প্রতি ক্লিকের জন্য $0.02 - $0.05 পর্যন্ত আয় হতে পারে। কখনো কখনো এর থেকে কম বেশি আয় হতে পারে।

তবে USA, UK সহ উন্নত দেশগুলো থেকে কোন ব্যক্তি যদি আপনার বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে তাহলে প্রতি ক্লিকের জন্য $0.02 - $5 পর্যন্ত আয় হতে পারে। কখনো কখনো এর থেকে বেশি আয় হতে হয়।

বাংলাদেশ থেকে আপনার ব্লগ সাইটে ১০০০ পেজ ভিউ হয় তাহলে গড়ে ২ - ২.৫০ ডলার আয় হতে পারে। তবে এতে নিরাশার কিছু নেই। আপনার লেখা আর্টিকেল যদি মানসম্মত এবং ইউনিক হয় এবং এর থেকে ভিজিটর যদি উপকৃত হয় তাহলে আপনার ওয়েবসাইটি গুগলে র‌্যাংক করবেই। আর ওয়েবসাইট র‌্যাংক করলে গুগল থেকে প্রতিদিন কম করে ৫ - ১০ হাজার  ভিজিটর পাবেন। কখনো কখনো আরো বেশি ভিজিটর পেতে পারেন।

কোন ওয়েবসাইটে প্রতিদন ১০ - ১৫ হাজার ভিজিটর আসলে সেখানে কম করে ৩০ -৫০ হাজার পেজ ভিউ হতে পারে। একটি ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি ভিজিটরের ১০০০ পেজ ভিউতে যদি ২ ডলার আয় হয় তাহলে ৩০ হাজার পেজ ভিউতে কম করে ৬০ ডলার প্রতিদন আয় হতে পারে। 

প্রতিদিন ৬০ ডলার হলে মাসে ৬০ x ৩০ = ১৮০০ ডলার। ১৮০০ x ৮৫ (টাকা প্রতি ডলার) = ১৫৩০০০ টাকা প্রতি মাসে আয় করতে পারবেন একটি মাত্র ব্লগ ওয়েবসাইট থেকে। 

আপনার সাইটে প্রতিদিন ৫ হাজার পেজ ভিউ হলেও কম করে ১০ ডলার আয় হবে দৈনকি। মাসে ৩০০ ডলার = ২৫৫০০ টাকা প্রায় প্রতি মাসে ঘরে বসে আয় করতে পারবেন। 

এটা কোন বাংলা ব্লগিং সাইটের হিসাব উল্লেখ করা হলো। যদি আপনি ইংরেজিতে ব্লগ লিখতে পরেন এবং প্রতিদিন এই ৫ হাজার পেজ ভিউ যদি বিশ্বের উন্নত দেশ যেমন- America, Canada, England, France, Singapore ইত্যাদি থেকে আসে তাহলে কম করে হলেও ২৫-৩০ ডলার আয় করতে পারবেন। কারণ এসকল দেশ থেকে CPC অনেক বেশি দেয়া হয়। 

আশা করি ব্লগিং কি, কিভাবে ব্লগিং শিখবেন, কিভাবে ব্লগিং করতে পারবেন, কি কি উপায়ে সহজে ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরী করা যায় এবং ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায় এ সকল বিষয়ে প্রথমিক ধারণা পেয়ে গেছেন। এসকল বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ....!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Custom Widget

Recent in Sports